অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত অ্যাপাচি এএইচ-৬৪ই যুদ্ধ হেলিকপ্টার হাতে পেতে যাচ্ছে ভারত। দুই সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত পৌঁছাবে সর্বাধুনিক এই যুদ্ধ হেলিকপ্টারের প্রথম চালান। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভারত পৌঁছাবে প্রথম ব্যাচের তিনটি এএইচ-৬৪ই। চলতি বছরের নভেম্বরে দ্বিতীয় দফায় আরও তিনটি হেলিকপ্টার হাতে পাবে ভারত।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ফোনালাপের পরই সামনে এলো এ তথ্য। ওই ফোনালাপে চলমান ও আসন্ন প্রতিরক্ষা সহযোগিতামূলক উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করেন দুই নেতা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ফোনালাপে অপারেশন সিঁদুরে ভারতকে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাজনাথ সিং। এ সময় পিট হেগসেথকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে এবং আত্মরক্ষা নিশ্চিতে সব সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে ভারত।
এ ছাড়া ওই আলাপে তেজস লাইট কমব্যাট–এমকে১এ উড়োজাহাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত জেনারেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন সময়মতো সরবরাহের বিষয়েও জোর দেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) ওই উড়োজাহাজগুলো তৈরি করছে। ভারতে জেট ইঞ্জিন উৎপাদনের জন্য একটি উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাবও দেন তিনি। সময়মতো ইঞ্জিন সরবরাহ করা হবে বলে রাজনাথকে আশ্বস্ত করেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এ ছাড়া উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের বিষয়েও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ হবে বলে জানান তিনি।
তবে, এলসিএ তেজসের জিই ইঞ্জিন সরবরাহের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা এখনই প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে স্বাক্ষরিত ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ছয়টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার সরবরাহের কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। শুরুতে ২০২৪ সালের মে-জুন মাসে হেলিকপ্টার সরবরাহের পরিকল্পনা থাকলেও সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যার কারণে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গড়ায়। এরই মধ্যে জোধপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এভিয়েশন কর্পসের প্রথম স্কোয়াড্রন গঠিত হয়েছে, যারা এই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার পরিচালনা করবে। তবে, গত ১৫ মাসেও হেলিকপ্টারগুলো হাতে পায়নি তারা।
এই হেলিকপ্টারগুলো ভারতের সেনাবাহিনীর এভিয়েশন কর্পসের আধুনিকায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিম সীমান্তে এই হেলিকপ্টার মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতাকে আরও জোরদার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হেগসেথ ও রাজনাথ সিং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির যৌথ বিবৃতিতে ঘোষিত প্রতিরক্ষা লক্ষ্যসমূহ অর্জনে দুই দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন। ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয় এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন তারা।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, পরবর্তী সাক্ষাতে আগামী দশ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।