ছেলে যেন পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে বিদেশ না যেতে পারে–সেই চেষ্টায় এক মা বিমানে বোমা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যে ফোনকল করেন। ফোন করে তিনি জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা রয়েছে। মুহূর্তেই তোলপাড় শুরু হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। থেমে যায় বিজি-৩৭৩ ফ্লাইট। তিন ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও বোমা পাওয়া যায়নি।
তবে এত কিছুর পরেও আটকানো যায়নি সেই প্রেমিক যুগলকে। নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর বিমানের যাত্রা আবার শুরু হয়, আর তাতেই চেপে বসেন ওই প্রেমিক ও প্রেমিকা। তারা নিরাপদে ওই ফ্লাইটে করে নেপাল পৌঁছে যান।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম কে এম শহিদুর রহমান জানান, ঘটনার তদন্তে নেমে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে তিনজনকে–ছেলে ইমনের মা রাশেদা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা এবং বন্ধু ইমরানকে।
র্যাবের ডিজি বলেন, গতকালকে ঘটনা ঘটে। সেটি হলো ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বোমা রয়েছে এমন একটি ফোন কল করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানানো হয়। যার ফলে ওই বিমানে যাত্রা স্থগিত করা হয় এবং তিন থেকে চার ঘণ্টা তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মারাত্মক ক্ষুণ্ন হয়। ইতোপূর্বেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। টেলিফোনের মাধ্যমে বোমার খবর দেওয়া হয়, পরবর্তীতে তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পরপরই আমরা অনুসন্ধানে নামি। সারা রাত অভিযান পরিচালনা করে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করেছে। এই বিষয়টি একটি দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনার তদন্তে জানা যায়, ইমন নামে এক ব্যক্তি পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে এই ফ্লাইটে করে নেপাল যাচ্ছিলেন। বিষয়টি ইমনের মা ও তার স্ত্রী জানতে পারেন এবং তার যাত্রা বন্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তারা কোনোভাবে সক্ষম হয়নি। তখন ইমনেরই আরেক বন্ধু ইমরান তাদের পরামর্শ দেন যদি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে জানানো হয় বিমানে বোমা আছে তাহলে যাত্রাটা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। সে অনুযায়ী ইমনের মা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে বিমানে বোমা থাকার তথ্য জানান।
ডিজি আরও বলেন, এই বিষয়ে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, এটি একটি গর্হিত কাজ। এসব কাজে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। কোনোভাবেই যেন এ ধরনের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে গ্রহণ করা না হয়। তারপরও গ্রহণ করলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।