ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন পরবর্তী সরকারের কোনো পদে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থাকবেন কিনা তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এ বিষয়ে খোলাসা করেন। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।
নিবন্ধের শুরুতে তিনি বলেন, এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সর্বস্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
নিবন্ধে তিনি আরও লিখেছেন, আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না। আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও।
এর আগে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বার্নামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা অনেকটা পথ এসেছি। এই আগস্টে আমাদের প্রথম বছর সম্পন্ন করেছি এবং আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। তার অন্যতম বড় অর্জন হলো ঐকমত্য কমিশন গঠন করা। যেটি ১১টি সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রতিবেদন এ মাসের শেষের দিকে দিতে পারে। যার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটির শেষ দিকে আসছি। সম্ভবত এ মাসের শেষ দিকে, আমরা ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন পাব।’
এই ঐকমত্য কমিশনকে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ও অন্য বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে সম্মতি আদায়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়ে, একটি ঐকমত্য প্রয়োজন। সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট নাকি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে- এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশ এখন সঠিক পথে যাওয়ায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। আর এবারের নির্বাচনটি আগের তিনটি ‘মিথ্যা’ নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে। অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো, জনগণ একটি নির্বাচন পাবে। কারণ আগের নির্বাচনগুলো ছিল ‘মিথ্যা’ নির্বাচন। তখন কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। মানুষ জানে না, ভোটকেন্দ্রে কী হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব লাখ লাখ ভোটার হাসিনার আমলে ভোট দিতে পারেননি, তাদের জন্য এবারের নির্বাচনটি অনেক বড় হবে।’