Tuesday, September 2, 2025

৬ মাস পর স্বাক্ষর দিতে কবর থেকে উঠে এলেন স্কুল কমিটির সভাপতি!

আরও পড়ুন

মো. জয়নাল আবেদীন মারা গিয়েছেন ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। মারা যাওয়ার আগে তিনি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বড়গোপালদী বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর পরও এই সভাপতি যেনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ভুলতে পারেননি। তাই তাদের ডাকে সারা দিয়ে মৃত্যুর ৬ মাস পরও কবর থেকে উঠে এসে হাজির হয়েছিলেন ২০২৪ সালের ১লা এপ্রিল। শিক্ষক-কর্মচারিদের প্রয়োজনে স্বাক্ষর দিয়ে আবার কবরে ফিরে যান। মো. জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার ৬ মাস পর কবর থেকে উঠে শুধু পশ্চিম বড়গোপালদী বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই গিয়েছিলেন। বাড়ি যাননি বা কোনো স্বজনের সাথেও দেখা করেননি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারির পদোন্নতির স্বাক্ষর দিতেই বিদ্যালয়ের সভাপতির কবর থেকে যেনো উঠে আসা। যুগান্তরের অনুসন্ধানে কাল্পনিক ঘটনা রচনার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারিদের সাজানো এমন কাল্পনিক ঘটনায় হতবাক স্থানীয়রাও।

আরও পড়ুনঃ  মানুষ না থাকায় গ্রাম পুলিশ দিয়ে খোঁড়া হয়েছে কবর

মৃত জয়নাল আবেদীনের মেঝো ছেলে কায়সার আহম্মেদ ঢাকায় থাকেন। তিনি যুগান্তরকে জানান, তার বাবা অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান। মারা যাওয়ার আগে তিনি ওই বিদ্যালয়টির সভাপতি ছিলেন। স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কিন্তু কোনো প্রমাণ দেখেননি।

যুগান্তরের হাতে আসা কাগজপত্র ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার পশ্চিম বড়গোপালদী বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. খলিলুর রহমানকে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর মিনানুর বেগমের ১৫তম গ্রেড প্রাপ্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেন কাগজপত্র দাখিল করেন।

২০২৪ সালের ১ এপ্রিলের তারিখের প্রস্তুত করা কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর মিনানুর বেগমকে পদোন্নতি দিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সভায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মৃত জয়নাল আবেদীনও উপস্থিত ছিলেন! সেখানে বলা হয়েছে ওই শিকক্ষক-কর্মচারীর পদোন্নতি দিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন ও প্রধান শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত কাগজে কোনো কিছু গোপন করা হয়নি। কোনো ভুলত্রুটি হলে তারা দায়ী থাকবেন। অথচ, ২০২৪ সালের ১লা এপ্রিলের তারিখ দেখিয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করা হলেও যুগান্তরের হাতে আসা বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীনের মৃত্যু সনদে দেখা যায় তিনি ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মারা গিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেনে-শুনে জালিয়াতিতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ  বোরকা পরে এজেন্ট ব্যাংকে ছিনতাই, তারপর যা হলো

এসব অভিযোগের বিষয়ে রোববার বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. নিজাম উদ্দিন ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি ছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের সুধীর বিশ্বাস নামে এক কর্মচারীর থেকে লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি অনুদান আত্মসাত, ৩০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য ও লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়।

জালিয়াতির মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়া অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর মিনানুর বেগম বলেন, সভাপতি জীবিত থাকতেই তার কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়। সেই কাগজ দিয়েই তার পদোন্নতি হয়। তিনি কোনো জালিয়াতির আশ্রয় নেননি।

আরও পড়ুনঃ  চাঁদা না দিলে পদকপ্রাপ্ত চা চাষিকে হত্যার হুমকি, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

অপর অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সঠিক কাগজপত্র ও বিধি মোতাবেক পদোন্নতি নিয়েছি।

অভিযোগের বিষয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ