রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পর হুমায়রা নামে এক শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন শিক্ষক পূর্ণিমা দাস। তবে আগুনের তীব্রতা ও উদ্ধারকারীদের বাধায় দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি তিনি। সেই শিশুর পোড়া ব্যাগটি রবিবার (২৭ জুলাই) খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে ফেসবুকে আবেঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন এ শিক্ষক।
পূর্ণিমা দাস ফেসবুকে লিখেছেন, আমি গত জুন মাসে স্কুলে জয়েন করার পর হুমায়রা ওর মাকে জিগ্যেস করে,‘আচ্ছা পূর্ণিমা আন্টিকে কে কি আমি এখন থেকে আন্টি বলবো না মিস বলব?’ ওর মা বলে, তোমার যা ভালো লাগে তাই ডেকো। ওর বাবা-মা আমার পূর্বপরিচিত ও খুব কাছের মানুষ।
তিনি বলেন, আমি স্কাই সেকশনের আইসিটি ক্লাস নিতাম। দুর্ঘটনার দিন ওদের অনেক কিছু লেখানোর ছিল। বাচ্চাগুলো একটুও লিখতে চায় না। আমি বিভিন্ন প্রলোভন দিতাম লেখানোর জন্য। ওইদিন বললাম, আমার সাথে সাথে যারা লিখে শেষ করবে, তাদের প্রথম পাঁচজনের খাতায় স্টার দেব।
তিনি আরও বলেন, ওরা সবাই কি এক্সাইটেড। অত ফাস্ট ওরা কখনো লেখে না। এতো তাড়াতাড়ি সবাই শেষ করে আমাকে মিস মিস করে ডাকাডাকি। আমি প্রথম পাঁচজনের খাতায় স্টার দেওয়ার পর দেখি, বাকিদের মন খারাপ তখন সব্বার খাতায়ই স্টার দিয়েছি।ওরা যে কি খুশি!
‘বিস্ফোরণের পর যখন আমাকে ওখান থেকে বের করছে, গ্রিলের বাইরে তাকিয়ে দেখি হুমায়রার মা আমাকে দেখে উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছে, আমার হুমায়রা কই? আমি পিছন ফিরে আগুনের দিক তাকালাম, এক মুহুর্তের জন্য ছুটে যাচ্ছিলাম আগুনের দিকে। কিন্তু ভলেন্টিয়াররা আমাকে আটকায়’, যোগ করেন তিনি।
পূর্ণিমা দাস বলেন, টান দিয়ে গ্রিলের ভাঙা অংশ দিয়ে আমাকে বের করে। নিচে নেমেই হুমায়রার মাকে জাপটে ধরলাম, সে একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। আর ছুটে ছুটে আগুনের দিক চলে যেতে চাচ্ছিল। কোনোরকমে উনাকে বসিয়ে পুরো স্কুল বাচ্চাটাকে খুঁজেছিলাম। কোত্থাও পাইনি ওকে, কোত্থাও না। আজ পেলাম ওর পোড়া ব্যাগটা।
ওটাই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কলেজের পেছনে ওর বাড়িতে এলাম। ওর বাবা মা এখানে নেই, মেয়েকে তাদের গ্রামে দাফন করেছে। ওরা নাকি আর ঢাকাতে আসবে না। একমাত্র সন্তান হারিয়ে ভাইয়া-আপু দিশেহারা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। আর পারি না। হুমায়রা,মা তুমি যেখানে থাকো ভালো থাকো। আন্টি তোমাকে খুব ভালোবাসে, ফেসবুকে লিখেছেন পূর্ণিমা দাস।