Sunday, August 10, 2025

নিখোঁজ স্কুলছাত্রীর মা আমার মেয়ে কোথায়, সে কি বেঁচে আছে?

আরও পড়ুন

‘আমার মেয়ে কোথায় কীভাবে আছে, সে কি বেঁচে আছে; জানি না। দুই মাস হতে চলল, আমার মেয়ের খোঁজ দিতে পারল না পুলিশ।’ রোববার (১০ আগস্ট) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নিখোঁজ এক স্কুলছাত্রীর মা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এ কথা বলেন।

নিখোঁজ ওই ছাত্রী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ১২ বছরের কিশোরী স্থানীয় উচাখিলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত।

ওই মা জানান, প্রায় দুই মাস থেকে নিখোঁজ রয়েছে তার কিশোরী মেয়ে। তাকে তুলে নেয়ার ঘটনায় থানায় জিডি নিলেও ৩৮ দিন পর অপহরণ মামলা নেয় পুলিশ। তবে এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হলেও রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি এবং মেয়েকেও উদ্ধার করতে পারেনি। এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাছে তাদের।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার অতি আদরের মেয়ে ছিল। কত জায়গায় গেলাম, কেউ আমার মাইয়ার খোঁজ দেয় নাই।’

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

ওই মা আহাজারি করে বলেন, ‘আমার বুকের ধনটা কোথায় গেল? আমার মেয়েকে ফেরত চাই, মেয়েকে ছাড়া বাঁচবো না। পুলিশ কাজ করছে না, যদি কাজ করত তাহলে আমার মেয়েকে ফেরত পেতাম।’

পরিবারের অভিযোগ, মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত একই ইউনিয়নের গোল্লাজয়পুর গ্রামের এক তরুণ। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেম নিবেদন করে উত্ত্যক্ত করায় দেড়মাস আগে মেয়েটি তার বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। এরপর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসতেন ও নিয়ে আসতেন বাবা-মা। মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত না করতে তরুণকেও শাসিয়েছিলেন মেয়েটির বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৮ জুন সকাল ৮টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটি বের হলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় তরুণ ও তার সহযোগীরা।

এ ঘটনায় ছাত্রীটির বাবা ১৯ জুন থানায় প্রথমে একটি নিখোঁজ জিডি করেন। পরে, মেয়েকে তুলে নেয়ার ঘটনা জানতে পেরে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ২৬ জুলাই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।

আরও পড়ুনঃ  দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড ছিলেন শিক্ষা সচিব জুবায়ের

নিখোঁজ কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় মেয়ে আমার কাছে জানিয়েছিল। ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম আমার ছোট্ট মেয়ের পিছু যেন না লাগে। কিন্তু আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। এত দিন হয়ে গেল, আমার মেয়েকে পাচ্ছি না। পুলিশ কিছুই করতে পারছে না, কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। এটাই আমার কষ্ট। আমার ছোট্ট ছেলে ও তার মায়ের কান্না কোনোভাবেই আর সইতে পারছি না।’

নিখোঁজ মেয়েটির বিদ্যালয়ের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল সে। মেয়েটা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়ের জন্য খুব অসহায় অবস্থায় আছে পরিবারটি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে তাকে খুঁজে বের করা।’

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জে হামলার নির্দেশনা দেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় আমরা তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারছি না। তবে, তাকে উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছি না। আশা করি, দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারব।’

এ দিকে, অপহরণের প্রায় দুই মাস হতে চললেও কিশোরী উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলাকে দুষছেন আইনজীবীরা।

ময়মনসিংহের নারী ও শিশু আদালতের আইনজীবী শাহজাহান কবীর সাজু বলেন, ‘মোবাইল ব্যবহার না করায় অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না, এই কথা ওসি দায় এড়ানোর জন্য বলছে। এটা তিনি বলতে পারেন না। তার মানে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি এবং অভিযুক্তের কাছে থেকে তিনি অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি অসদাচরণ ও দায়িত্ব অবহেলা। এজন্য প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনিভাবে বলা আছে।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ