গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জানে আলম অপু গ্রেফতারের আগে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি চাঁদাবাজির ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। তবে অপুর স্ত্রী আনিসা বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দাবি করেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন নির্যাতনের মাধ্যমে সেই ভিডিও ধারণ করতে বাধ্য করেন।
গুলশানে সাবেক মহিলা এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনার একটি ফুটেজ আলোড়ন তোলে গোটা দেশে। সেই ঘটনায় মামলা হলে ২ আগস্ট গ্রেফতার হন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু। এর আগে একই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মোট ৬ জনকে। গ্রেফতারের পর আসামিদের চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
এদিকে ১৩ আগস্ট রাতে অপুরই করা একটি ভিডিওতে ভিন্ন মাত্রা পায় চাঁদাবাজির ঘটনা। যা সামাজিক মাধ্যমে এরইমধ্যে ভাইরাল। সেই ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, চাঁদাবাজির ঘটনার পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ভিডিওটি ধারণ করেন তিনি নিজেই। ৩৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তবে ঘটনার মোড় ঘুরে যায় বৃহস্পতিবার সকালে অপুর স্ত্রী আনিসার বক্তব্যে। রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অপুর স্ত্রী দাবি করেন, অপুকে গ্রেফতারের আগের রাতে তাকে তুলে নেয় বিএনপির এক নেতা। সেই নেতার বাসায় রাখা হয় বলে জানান তিনি। সে সময় জোরপূর্বক তার ভিডিওটি রেকর্ড করা হয় বলেও দাবি অপুর স্ত্রীর।
অপুর স্ত্রী আরও জানান, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অথবা নাহিদের নাম বলতে বাধ্য করেন বিএনপির ওই নেতা।
এদিকে গুলশানের এ ঘটনায় সরকারের কোনো উপদেষ্টা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সরকারের স্বার্থেই চাঁদাবাজির ঘটনার অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চাঁদাবাজির মামলায় অপুকে ৪ দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়। রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন অপু।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পাঁচ নেতা। শাম্মী পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েক দিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন।
সবশেষ গত ২৬ জুলাই রাতে আবারও ওই বাসায় গিয়ে ৪০ লাখ টাকা আনতে যান এই পাঁচ যুবক। পরে পুলিশে খবর দিলে তাদের আটক করে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। এতে তিনি ছয়জনকে আসামি করেন।
আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার চারজন ছাড়া বাকি দুজনের একজন শিশু। অন্যজন জানে আলম অপু, তিনি ঘটনাস্থলে পালিয়ে যান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা।
এক পর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন।
এর পর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মুঠোফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যায়।
২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় আবার রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন।
পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় অন্য আসামি অপু পালিয়ে যান।