বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় ক্যানসারে পুরুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন প্রাথমিক সতর্কবার্তা এড়িয়ে যাওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা।
সম্প্রতি অনকোলজিস্ট ডা. হরিশ বর্মা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে জানিয়েছেন, কেন পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এবং কিভাবে কয়েকটি জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
নারীদের তুলনায় ক্যানসারে পুরুষদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন অনকোলজিস্ট ডা. হরিশ বর্মা। তিনি বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো-
চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া
নারীরা নিয়মিত গাইনোকলজিস্টের কাছে যান বলে বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে। কিন্তু পুরুষরা সাধারণত তখনই ডাক্তার দেখান, যখন অসুস্থতা গুরুতর হয়ে ওঠে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ পুরুষ শুধু ‘একেবারেই দরকার হলে’ চিকিৎসকের কাছে যান। ফলে ক্যানসার দেরিতে শনাক্ত হয় এবং চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়।
প্রাথমিক লক্ষণকে উপেক্ষা করা
অকারণ ওজন কমে যাওয়া, গুটি বা ফোলা, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, প্রস্রাব বা মলত্যাগে পরিবর্তন- এসব ক্যানসারের সতর্ক সংকেত। কিন্তু অনেক পুরুষ এগুলোকে গুরুত্ব দেন না, যতক্ষণ না রোগ অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে।
সবল দেখাতে চাওয়ার প্রবণতা
সমাজে পুরুষদের সবল ভাবমূর্তির সঙ্গে বড় হওয়ার কারণে অনেকে ব্যথা বা অসুস্থতাকে গোপন করেন। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হয় না, বরং ক্যানসার ছড়ানোর সুযোগ পায়।
অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা
ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, রাত জাগা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস এসব কারণে পুরুষরা ফুসফুস, লিভার, গলা, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন।
শরীরের ভেতরের ঝুঁকি না জানা
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা প্রদাহ- এসব কারণও ক্যানসারকে উসকে দিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ শুধু গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করান।
ঝুঁকি কমানোর উপায়
বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা ও হরমোন চেকআপ করুন। ধূমপান, মদ্যপান ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার করুন। ঘুম, সুষম খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামকে অগ্রাধিকার দিন। স্বাস্থ্য নিয়ে ডাক্তার, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
ক্যানসার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো সচেতনতা। বিশেষ করে পুরুষদের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং যে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া। শক্ত বা সাহসী হওয়ার মানে অসুস্থতা লুকানো নয়; বরং সময়মতো চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ক্যানসার নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।